সোনারগাঁয়ে সুযোগ সন্ধানীদের ডাকাতি, ঘর-খামার ভেঙ্গে লুটে নিল হাঁস-মুরগী !
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সোনারগাঁয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে ডাকাতি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে ভুক্তভোগীর লিজ নেয়া সরকারী জমি দখলসহ আশ্রয়কারীর আধা পাকা ঘর ভেঙ্গে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালাংকার লুটে নিয়েছে তারা। সুযোগ সন্ধানীরা ভেঙ্গে দিয়েছে আস্তো খামার ঘর। একইসাথে লুটপাট করে নিয়েছে সকল হাঁস-মুরগী ও কবুতর। এমনকি ৩০ থেকে ৪০ বছর পুরনো বিভিন্ন ফল গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে সেইসব স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।
বুধবার (১৪ আগস্ট) সকালে এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার কার্য্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী সৈয়দ হাবিবুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে সনমান্দি ইউনিয়নের কিছু সন্ত্রাসীরা। গত মঙ্গলবার ৬ আগস্ট ভোরে ঘুমন্ত অবস্থায় ইউনিয়নটির মাঝের চর গ্রামের ৭ নং ওয়ার্ড এলাকায় এ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে করে দীর্ঘ বছরের আশ্রয়স্থল ও চাষাবাদ করা জমি হারিয়ে ওইসব সন্ত্রাসীদের হুমকীতে অনিরাপত্তায় রয়েছে ভুক্তভোগী বৃদ্ধ দম্পত্তি ও কন্যা। আর এ অভিযোগটি জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য দপ্তরেও অবগত করা হয়েছে বলে তিনি জানান ।
ভুক্তভোগীর দাবি, দীর্ঘ বছর ধরে লিজের মাধ্যমে এ জমিতে চাষাবাদ করে সেখানে আধাপাকা ঘরে বসবাস করে জীবীকা নির্বাহ করছেন তিনি। গত মাসের ৭ তারিখ এ জমির কাগজের নবায়নও রয়েছে। যা প্রতি বছরই সরকারী সকল ফি দিয়ে তিনি ভোগ করে আসছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয়। কখনো কারো সাথে মারামারিতেও জড়ায় নেই। কিন্তু হঠাৎ করেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনি না থাকায় পাশের বাড়িতে থাকা সুযোগ সন্ধানী লোকজন তার সন্ত্রাসী বাহিনি এনে ভুক্তভোগীর বাসায় লুটপাট করিয়ে সবকিছু দখলে নিয়ে যায়। দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করার পরে তাকে ও তার স্ত্রী সহ মেয়েকে মারধর করে বের করে দেয়।
অভিযোগে জানা গেছে, এ ঘটনায় ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। যারা হলো-১। মোঃ গিয়াসউদ্দিন (৬০) পিতা, মৃত মোঃ ছায়েদ আলী ২। আমিন (৫৭), ৩। সাহাবুদ্দিন (৫৫) ৪। ইয়াজউদ্দিন (৫৩) ৫। মাহিন (৫০) ১-৫ উভয়ের একই পিতা) ৬। মনির (৩৭) পিতা, গিয়াসউদ্দিন ৭।আমির (৩৭), ৮। মাসুম (৪০) পিতা, সাহাবউদ্দিন, ৯। রেজাউল (২২) পিতা, ইয়াজউদ্দিন, ১০। খোরশেদ (২৪) পিতা, মাহিন,১১। মেহদী (২২) পিতা, ফারুক। ১২। জৈগননেশা (৫২) স্বামী , গিয়াস উদ্দিন, ১৩। আয়শা (৪৩) স্বামী, সাহাবউদ্দিন, ১৪। রেহানা (৪৫) স্বামী, আমিন, ১৫।কামরুন্নাহার স্বামী, ইয়াজউদ্দিন, ১৬।পারুল (৪০) স্বামী শফি, ১৭। মাকসুদা(৫৮) স্বামী, এসহাক, ১৮। মাকসুদা (৫৪) স্বামী ফারুক, ১৯। রুমী (৩৪) স্বামী: মাছুম, রিতা (২৩), স্বামী : আমির। উল্লেখিত বিবাদি সকলের ঠিকানা সোনারগাঁ থানাধীন মাঝের চর গ্রাম। গুদারাঘাট বড় মসজিদ সংলগ্ন।
এদিকে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে যাচাই বাছাই করলে সত্যতা খোঁজে পায়। লুটপাটে লন্ডভন্ড হওয়া সে স্থানে দেখতে পায় সবকিছু ভেঙ্গে শুন্য করে দেয়া হয়েছে। কেটে ফেলা হয়েছে অসংখ্য ফলের গাছ। ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে আশ্রয় নেয়া আধাপাকা ঘর, খামারসহ সবকিছু। এমনকি ওই সরকারী লিজকৃত জমিতে অবৈধভাবে টিন দিয়ে বেষ্টনী দিয়ে নিজেদের দখলে নিয়েছে অভিযুক্ত সন্ত্রাসী দল। খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, অভিযুক্তরা কোনো দলের নয়। তারা নাম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে মাত্র।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্তের সাথে কথা হলে একপর্যায়ে তারা এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ফেলে এবং এমন একটা সময়ের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় ছিল বলে জানায় ক্ষুদ অভিযুক্তই।
এ বিষয়ে কথা হলে অভিযুক্ত মাহিন জানায়, আমরা জিনিসপত্র ভাঙ্গারির কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। এ জমি আমাদের তাই দখল করেছি। জমির মালিকের নাম জানায় সায়েদ আলী। তবে জমির মালিকানার সকল কাগজ দেখাতে বললে তারা উপস্থিত সংবাদকর্মীদের দেখাতে পারে নি। এমনকি এ সময়ে প্রশাসনকে না জানিয়ে এ ধরণের লুটপাট ঠিক হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অপেক্ষায় ছিলাম দীর্ঘ বছর। এখন সুযোগ পেয়েছি তাই আমরা দখলে নিয়ে তাদের বের করে দিয়েছি।
অন্যাদিকে, জমির রেকর্ড খোঁজ নিলে অলিপুরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এ জমিটি সরকারি লিজের বর্তমান মালিক সৈয়দ রেজাউল হোসেনের নাম পাওয়া যায়। লিজকৃত নাল জমি যার মৌজা : লালচর, ভিপি-১৬/৭৫, ডিসিআর বহি নং-২৬৯০, রসিদ নং- ১৩৪৪৭২, স্বারক নং-১৩৮৯, সিএস নং-৪৩, আরএস নং-৭৪ ও ৭৫ দাগ। লিজ নেয়া রেজাউল যিনি ভুক্তভোগী সৈয়দ হাবিবুর রহমানের ভাতিজা। তিনি তার চাচাকে চাষাবাদ করে জীবীকা নির্বাহ করার জন্যই দিয়েছেন। এ জমিটি ১৯৭৫ সন থেকে সরকারীভাবেই লিপিবদ্ধ রয়েছে। অথচ অভিযুক্তদের দাবি ১৯৭৯ সালে তারা ক্রয় করেছে। সে হিসেবে প্রশ্ন আসে, এ জমিটি কি সরকার তার কাছে বিক্রি করেছিল? তাই উপজেলা ভূমি অফিসে খোঁজ নিলে সেখানেও বিক্রি করার কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। সুতরাং অভিযুক্তদের দাবিটি মিথ্যা প্রমানিত হয়। আর দখলে নেয়া অবৈধ এবং লুটপাটের স্বিকারোক্তিতে তারা কাজটি কোনোভাবেই আইন অনুযায়ী সঠিক করেনি, এমনটাই বলছেন স্থানীয় অনেকেই।
এ বিষয়ে লিজ নেয়া সৈয়দ রেজাউল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোতলিব হোসেন এ জমিটি লিজ নিয়েছিলেন। সৈয়দ হাবিবুর রহমান আমার চাচা অসচ্ছল বিধায় তিনি এ জমিটি চাষাবাদ করে চলতেন। মাটি ভরাট করে উপযুক্ত করতে আমরা এতে অসংখ্য টাকাও ব্যয় করেছি। আমার পিতা গত বছর মৃত্যুবরণ করায় এখন আমি নবায়ন করে লিজ নিয়েছি। আমিও চাচাকে ব্যবহার করার জন্য মৌখিক অনুমতি দিয়েছি। যারা এ কাজ করেছে তারা আসলে সুবিধা নিতে এ লুটপাট করেছে। আইন অনুযায়ী এ ডাকাতি এবং সরকারী জমি দখল করার মত দু:সাহস দেখানোর জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমি উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।
এদিকে, জেলায় হঠাৎ করেই অপরাধ ও লুটপাট বেড়ে যাওয়ায় এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক জানান, যেকোনো অপরাধী ও লুটপাটকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। আমাদের বিজিবি ও সেনাবহিনী তৎপর রয়েছে। এছাড়াও এখন থেকে পুলিশ থানায় কার্যক্রম চালু করেছে। আশা করি প্রতিটি থানায় এ ধরনের সুযোগ সন্ধানী লুটপাটকারী বা অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিবে। আর এ বিষয়গুলো আমরাও গুরুত্বসহকারে দেখছি।