নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতিতে
শত অপকর্মেও বহাল তবিয়তে ডা. শাহনেওয়াজ
নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের সভাপতি পদ থেকে ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন ডাক্তার শাহনেওয়াজ চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অর্থ আত্মসাৎসহ অভিযোগের পাহাড় জমা হয়েছে পরিচালনা কমিটির কাছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটিকে ম্যানেজ করে আবারো স্বপদে বহাল হওয়ার চেষ্টা করছেন শাহনেওয়াজ চৌধুরী- এমন তথ্য পাওয়া গেছে একটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শংকায় দিন কাটাচ্ছেন। কারণ ডাক্তার শাহনেওয়াজ চৌধুরী যদি আবার স্বপদে বহাল হতে পারেন তাহলে আবার দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব শুরু করবেন বলে তাদের অভিমত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী জানান, ডাক্তার শাহনেওয়াজ চৌধুরী কোন সদস্য পদই নেই ডায়াবেটিক সমিতিতে। তিনি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আরেকজনের নাম কেটে নিজের নাম বসিয়ে সমিতির সদস্য হয়েছেন। তাহলে তিনি সমিতির জীবন সদস্য পদে বহাল থাকেন কি করে। সেই সাথে তারা আরো কয়েকটি প্রশ্ন রেখেছেন প্রশ্নগুলো হলো: উনিতো বলেন প্রতিষ্ঠা কালীন জীবন সদস্য, তাহলে এত পিছনে কেনো? ১-২০০ নং জীবন সদস্য দের সবার ফর্ম টাইপ মেসিনে টাইপ করা তাহলে উনারটা কম্পিউটার এ কেনো? অন্যের নম্বর কেটে কেন? অন্যদের ছবি নাই, টেলিফোন নম্বর নাই, উনারটায় আসলো কিভাবে? সদস্য হবার জন্য ফি জমা দেয়ার রশিদ নম্বর নাই কেন? স্বাক্ষরে মিল নাই কেন? বয়সেও মিল নেই কেন? কোন তারিখ নেই কেনো?
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন ডাক্তার শাহনেওয়াজ চৌধুরী। শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে সংগঠনের বিশেষ সাধারণ সভায় লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় সংগঠনের জীবন সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জীবন সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমান কমিটির মেয়াদ আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এবং এই ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করে নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে জানানো হয়। বর্ধিত কমিটিতে সভাপতি ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী সভাপতি পদে আর থাকবেন না এবং দু-একদিনের মধ্যে কার্যকরী কমিটি নতুন সভাপতি নির্বাচন করবেন- এমনটাই জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন চুন্নু।
নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের সভাপতি ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও স্বৈরাচারিতার নানা অভিযোগ উঠেছে অনেক আগেই। কিছুদিন আগে ডায়াবেটিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক এওয়াইএম হাশমত উল্লাহ সংবাদ সম্মেলন করে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি নানা ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
মঙ্গলবার ২৮ ডিসেম্বর সকালে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শাহনাজ চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করে কালো ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করেন হাসপাতালের সামনে। মানববন্ধন থেকে বলা হয়, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সংস্থার সদস্যপদ পাওয়া ডা. শাহনাজ চৌধুরীকে অপসারণ করে হাসপাতালের সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। এ লক্ষ্যে তারা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এসব অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগপত্র নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি ও ডায়াবেটিক হাসপাতাল সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর কাছে দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।
এদিকে একের পর এক অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি আমি জেনেছি এবং লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আজকে আমাদের একটি মিটিং ছিলো। সে মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং এসব অভিযোগের বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য অ্যাডভোকেট শওকত আলীকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, ফয়েজ উদ্দিন লাভলু, আজিজুল্লাহ এবং শামসুল ইসলাম। এই কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। তখন এসব অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য গত ২৩ ডিসেম্বর সকালে নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতি ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের সভাপতি ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও স্বৈরাচারিতার নানা অভিযোগে ডায়াবেটিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক এওয়াইএম হাশমত উল্লাহ শহরের গলাচিপা মসজিল সংলগ্ন সবুজ সার্থী সামাজিক সংগঠন এর কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক এওয়াইএম হাশমত উল্লাহ লিখিত অভিযোগে বলেন, নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ডা. মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী। ২০১৯-২০২১ মেয়াদের জন্য তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। বিধি মোতাবেক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে হলে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত একটি ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করতে হবে। উক্ত ডিক্লারেশন এবং নাডাসের গঠনতন্ত্র বিধিমালার পৃষ্টা ২৩ এবং ২৬ (খ) তে বলা আছে সমিতির কোন সদস্য যিনি নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে ইচ্ছুক, তাকে সমিতির সহিত ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি হতে মুক্ত থাকতে হবে। অথচ তিনি নাডাসের বিভিন্ন প্রজেক্টের কো অর্ডিনেটর হিসেবে বেতন ও ভাতা নিচ্ছেন এবং এইচবিএওয়ানসি প্রজেক্ট হতে কয়েক বছর ২০ শতাংশ কমিশন নিয়েছেন যা ডিক্লারেশন ফরম ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। শুধু তাই নয় ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির জীবন সদস্য হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত জীবন সদস্য না হয়েও সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করে অনেক সুবিধা ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সমিতির মূল রেজিস্টারে কোথাও তার নাম নাই। ১৬৩ নং সদস্য মরহুম গোলাম মোস্তফা ভূইয়ার নামটি কেটে তার নাম লিপিবদ্ধ হয়