স্টাফ রিপোর্টার:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৮নং ওয়ার্ডের শহিদনগরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লিজকৃত জমি ভোগ দখলে বাধা ও হুমকি প্রদান সহ বিভিন্নভাবে হয়রানী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন তপু।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশেনের ১৮নং ওয়ার্ডের শহীদনগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা মৌজায় খতিয়ান নং ১ এর চর্চা দাগ নং ৪৭৮/৭১০ ও ৪৭৮/৭১১ নাল মং ১৫৪ শতাংশ জমি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের আমল থেকে লিজ নিয়ে মসিনাবন্দ গোগনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আফাজউদ্দিন, সালাউদ্দিন তপু, এস এম মোসলেহ উদ্দিন, মো: মনির হোসেন, মোঃ রাশেদ, এস এম গিয়াসউদ্দিন, মো: শরীফ হোসেন, মো: সিদ্দিকুর রহমান, শের মোহাম্মদ, মো: হোসেন (ফকির চাঁন) বিভিন্ন ফসলাদী চাষাবাদ করে ভোগদখল করে আসছেন। পরবর্তীতে নাল জমিটি ভরাট করে ভোগ দখল করছিলেন তারা। তবে সম্প্রতি সরকারী এই জমিটি থেকে লীজ নেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উৎখাত করে জায়গাটি দখলে নিতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে স্থানীয় এলাকার স্বার্থান্বেষী একটি চক্র। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২১/০১/২০২২ ইং তারিখে সকাল আনুমানিক ১০টার সময় সরকারী ওই খাস জমিতে যেয়ে অভিযুক্ত ১৮নং ওয়ার্ডের শহীদনগর এলাকার বইসন্দা ১। আতাবর মিয়া (৫০), পিতা-মৃত মালেক দেওয়ান, ২। কবির হোসেন (৪৫), পিতা-আলাউদ্দিন, ৩। জুবায়ের (২৫), পিতা-মৃত জাকির, ৪। পিয়াল (২২), পিতা-ঐ ৫। জিয়া (৪৫), পিতা-মালেক দেওয়ান, ৬। সোয়েব (২২), পিতা-আমির দেওয়ান, ৭। তোফাজ্জল হোসেন টিয়া (৫০), পিতা-মৃত আঃ রহমান, ৮। তাহের (৪৫), পিতা-মৃত রাজাকার জব্বার ৯। জান্নাত (৫৫), পিতা-মুনসুর সহ এলাকার কিছু যুবক উক্ত জায়গাটি তাদের দাবি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এসময় জায়গাটির ভোগদখলে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন তপু, মনির হোসেন, মোসলে উদ্দিন, মোঃ শরীফ হোসেনসহ আরো কয়েকজন বাধা প্রদান করলে অভিযুক্তরা সরকারি খাস জমিটিতে নিজেদের মতো করে খেলার মাঠ, কবরস্থান বানাবে বলে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদান করে অশ্রাব্য ভাষায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গালাগাল করে স্থান ত্যাগ করে।
এ বিষয়ে সরকারি খাস জমিটির লীজ নেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন তপুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, আমাদের লীজ নেয়া জমিটি লম্বায় ১ একর ৫৪ শতাংশ জায়গা। এই জায়গাটি আমরা পুরোটা টিনের বেড়া দিয়ে সীমানা দিয়েছিলাম। ঘটনার দিন সকালে আতাবর মিয়ার নেতৃত্বে অভিযুক্তরা সহ ১০/১২ জন উঠতি বয়সের যুবক নিয়ে পুরো সীমানা ভাংচুর করে। আর এই ভাংচুর সহ সরকারি জায়গাটি দখল করার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে শহীদ নগর এলাকার আব্দুর রহমানের দুই ছেলে আসলাম ও ফারুক হোসেন রিপন। সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হামলাকারীদের দিকনির্দেশনা দিয়েছে রিপন। আমরা বাঁধা দিতে গেলে রিপন আমাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে এবং হুমকি প্রদান সহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
সালাউদ্দিন তপু আরো জানান, মূলত এই ফারুক হোসেন রিপন একজন চিহ্নিত ভূমিদসু্য। তার বিরুদ্ধে ৪/৫টি প্রতারনা মামলা রয়েছে যেগুলোর সাজাপ্রাপ্ত আসামী সে। তবে রহস্যজনক কারনে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছেনা। আসলাম ও রিপন সরকারি এই জায়গাটি দখল করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে পিছন থেকে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আর তাদের সাথে হাত মিলিয়ে সামনে থেকে কাজ করছে আতাবর মিয়ার নেতৃত্বাধীন চক্রটি। এই ভূমিদসু্য সিন্ডিকেট তাদের নীল নকশা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে এলাকার যুব সমাজের সেন্টিমেন্টকে হাতিয়ার বানিয়েছে। জায়গাটি দখলে নিতে পারলে খেলার মাঠ হবে এ ধরনের মিথ্যা প্ররোচনা দিয়ে যুব সমাজকে আমাদের বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে আসলাম ও রিপন।
এদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন তপুর অভিযোগের ভিত্তিতে সৈয়দপুর এলাকার আব্দুর রহমানের পুত্র ফারুক হোসেন রিপনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চেক জালিয়াতি, ভূমিদসু্যতা, কর ফাঁকি, প্রতারনা, জাল দলিল চক্রের সাথে সক্ষতা সহ তার বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। স্থানীয়ভাবে তদন্ত করে জানা যায় উক্ত রিপন একজন মামলাবাজ প্রকৃতির লোক। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৫টি চেক জালিয়াতি মামলা। কিছুদিন পূর্বে চেক জালিয়াতির মামলায় জেল খেটেছে। এছাড়া ২০১২ সালেও একবার চেক জালিয়াতি মামলায় সদর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। বর্তমানেও কয়েকটি প্রতারনা মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, নগরীর ডালপট্টি এলাকার বি দাস রোডস্থ মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাষ্টের ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে দখল করে রাখার অভিযোগ রয়েছে রিপনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় তার অপকর্মের সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিলো।