নিজস্ব প্রতিবেদক:
ডিএনসিসি’র নতুন ওয়ার্ডগুলোর ২৯ কিলোমিটার খাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে উদ্ধার করার কথা জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
আজ উত্তরখান এলাকার কাঁচকুড়া হাইস্কুল মাঠে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে যুক্ত হওয়া ১৮ টি ওয়ার্ডে সড়ক অবকাঠামো ড্রেনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ ১) প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র বলেন, ঢাকার পূর্বাঞ্চল শুধু বালু দিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ড্রেজার লাগিয়ে সমস্ত জায়গা ভরিয়ে ফেলছে। এর জন্য প্রয়োজন ২৯ টি খালকে উদ্ধার করা। যে খালগুলো দিয়ে আবারো নৌকা চলবে। খালের পাশে হাঁটার পথ, সাইকেলের পথ এবং সবুজায়ন করা হবে।
নতুন এই অঞ্চলটি সাজিয়ে তোলার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৫শ ৩৮ কোটি টাকা। ওয়ার্ডগুলোতে খেলার মাঠ করার মতো সিটি করপোরেশনের অধীনে জায়গা নেই উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এই জমিগুলো আছে বিভিন্ন সংস্থা এবং মন্ত্রণালয়ের কাছে। আমাদের এক হাজার একর জায়গা প্রয়োজন এসব বিষয়ে গড়ে তোলার জন্য। যা পেলেই সিটি করপোরেশন নিজস্ব খরচে ঢেলে সাজাবে।
মনুষ্য বর্জ্যের কারণে দখলে না যাওয়া খালগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, গ্রাম কিংবা ঢাকার বাহিরের মানুষ যেখানে প্রত্যেকটি বাড়িতে সেপটিক ট্যাংক রাখে, আমাদের শহরের মানুষ তা ড্রেনের সাথে যুক্ত করে দিচ্ছে। ফলে খালগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নগরীর ভেতরে এক কাঠা দুই কাঠা জমি বিভিন্ন ডেভলপারদের হাতে চলে যাচ্ছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রয়োজন। এ ছোট স্থানগুলো সিটি করপোশনের কাছে আসলে আমরা ওপেন স্পেস হিসেবে সাজিয়ে তুলবো।
পরিকল্পিত নগরের অংশ হিসেবে ডিএনসিসির নতুন ওয়ার্ডগুলো গড়ে তোলা হবে জানিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন,পরিকল্পিত নগরীর অংশ হিসেবে ”কমপ্লেক্স” করা হবে। যেখানে থাকবে কমিউনিটি সেন্টার, কমিউনিটি ক্লিনিক, ওয়ার্ড অফিস, লাইব্রেরী এবং কালচারাল সেন্টার ইত্যাদি। একটি পরিকল্পিত শহর বলতে আমরা বুঝি খেলার মাঠ,পার্ক,বাস ট্রাক টার্মিনাল,কিচেন মার্কেট,কাঁচা বাজার,ক্যাটেল মার্কেট,স্যানিটারি ল্যান্ডফিল,এসটিএস,পাবলিক টয়লেট, ঈদগা-মসজিদ, উপসনালয়। যেগুলো করতে অবশ্যই আমাদের জায়গা লাগবে। যা ডিএনসিসির নেই।
শহরের মধ্যে একটি হোলসেল মার্কেট থাকতে পারে না জানিয়ে মেয়র বলেন, যেমনটি কারওয়ান বাজারে রয়েছে। আধুনিক বাজারের অংশ হিসেবে কারওয়ানবাজার নিয়ে ইতোমধ্যে ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। এরকম আরো অনেক বাজার রয়েছে যেগুলো সাজিয়ে তোলা হবে।
স্মার্ট সিটির একটি অন্যতম শর্ত লাইটিং জানিয়ে মেয়র বলেন, ঢাকা শহরে (উত্তর সিটি) আমরা ৫২ হাজার লাইট লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি। যার মধ্যে ৩৬ হাজার ইতিমধ্যে লাগানো হয়েছে। যা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এছাড়াও আগামী পহেলা এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশনের সকল জনগণ অনলাইনের মাধ্যমে তাদের টেক্স দিবি। ”সবার ঢাকা অ্যাপসে”র মাধ্যমে জনসাধারণ তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে নতুন ভাবে যুক্ত হয়েছে ১৮ টি ওয়ার্ড। যেখানে সড়ক অবকাঠামো ড্রেনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ ১) প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ আজ উদ্বোধন করা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণখানের কসাইবাজার থেকে উত্তরখানের কাঁচকুড়া বাজার পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজের মধ্যে দিয়ে নতুন ১৮ টি ওয়ার্ডের উন্নয়নের মেগা প্রজেক্টের কাজ শুরু হবে। নবগঠিত ১৮ টি ওয়ার্ডে মেগা প্রকল্পের আওতায় চলতি মাসেই কাজ শুরু হবে।
ডিএনসিসির নতুন এসব ওয়ার্ডগুলোর জন্য ২০২০ সালের ১৪ জুলাই ৪ হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। করোনা মহামারির জন্য কাজ শুরু হওয়া পিছিয়ে গিয়েছিল এতদিন। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন ওয়ার্ডগুলোতে
উন্নয়ন কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
২০১৬ সালের ৯ মে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে (নিকার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে ৮টি করে ইউনিয়ন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরের বছর নবগঠিত ৩৬টি ওয়ার্ডকে দশটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়।
ডিএসসিসির শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়নকে ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়।
অপরদিকে ডিএনসিসি অন্তর্ভুক্ত বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, বেরাঈদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নকে ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়।