এলা হামার কি হবে!
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুকুল মিয়ার ঘরে চাল ছিল না। অভাবী সংসারের ছোট চার ছেলে ও শিশুকন্যার খাবার জোগাতে ২০১৪ সালের ১ মার্চ রাতে ভারতে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে মারা যান। পরদিন বাবার লাশ ঘরে রেখে বড় ছেলে আল মামুন রিপন এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেও জিপিএ-৫ পায়।
জীবন যুদ্ধের সাথে লড়াই করে কখনও টিউশন কখনও হোটেলে থালাবাটি পরিষ্কার করে, কখনও পণ্য ডেলিভারি, শেষে সবজি বিক্রি করে কোনমতে ছাত্রত্ব ও পরিবার টিকিয়ে রেখেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আল মামুন রিপন। কিন্তু এখন তার ছাত্রত্ব টেকানো দায়। ২৭ মার্চ সেমিষ্টার ফাইনাল কিন্তু সে গত শুক্রবার ভোর রাতে শিবির সম্পৃক্ততার অভিাযোগে তাকে মেস থেকে কোতওয়ালি থানা পুলিশ আটক করে। পরে কোতয়ালী থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৫ (৩) এ ধারায় মামলা দিলে আদালত তাকেসহ ১২ জনকে জামিন না দিয়ে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
মা হাসিনা বেগম বলেন, পাঁচটা ছাওয়ার মধ্যে উয়ায় বড়। মানষের জাগাত থাকি। দুইজনে মিলি বাকি ছাওয়াগুলাক মানুষ করবানছি। মোর ছাওয়া কোন রাজনীতিত নাই। কলেজের বড় ভাইগুলা কাজ দিয়ে খাওয়ায়। পাস করি বাইর হইলে চাকরী হবে। অভাবের সংসারত আর অভাব থাকপার নয়। এলা হামার কি হবে !
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়িতে বাড়ি আল মামুন রিপনের। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী।
বাবা মারা যাওয়ার পরে নিজের ও পরিবারের খরচ নিজেই চালাত। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় হারমোনিয়াম,তবলাসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র কিনতে পারেনি। খাবার জোটানোর টানাহেচড়ায় পড়াশোনায় নিয়মিত করতে পারিনি। আগামীকাল তার ১ম বর্ষ ২য় সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা।
ফুলবাড়ি উপজেলার স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা হোসেন মাষ্টার বলেন, রিপন কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। বাবা মারা যাওয়ার পরে সে নিজের পড়াশোনা আর পরিবার চালাত।
রিপনের বন্ধু ওয়াজেদ রানা বলেন, জগন্নাথে পড়াশোনা করার সময় তার সংসার টেকানোয় দায় ছিল। টিউশনির টাকায় সংসার পড়াশোনা চলত না। হোটেল বয় থেকে সব ধরনের কাজ করেছে সে। রিপন আটক হওয়ার আগেও লহ্মীবাজারে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করত। শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বড় ভাইয়ের মেসে ফ্রিতে থাকার খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বাড়তি উপার্জনের টাকা সংসারে দিতো।