শনিবার (২৬ মার্চ) তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নে চুরি করার দায়ে কাজী ডেকে স্বামীকে তালাক দিয়েছেন স্ত্রী।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, ২২ বছর আগে মাসুমা বেগমের (৪৬) প্রথম স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এরপর ২০০৭ সালে বরগুনার সরিষামুড়ি ইউনিয়নের শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে ফোরকানের সঙ্গে বিয়ে হয় মাসুমা বেগমের। এরপর থেকেই উপজেলার বথিপাড়া সরকারি আশ্রয়ণে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। বিয়ের পর থেকেই ফোরকান কোনো কাজকর্ম না করে বিভিন্ন স্থানে চুরি করতেন বলে জানা যায়।
এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সংসারে ঝামেলা লেগেই থাকত। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ভোররাতে উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের মধ্য পাওয়াপাড়া জামে মসজিদ ও পাওয়াপড়া দোকানঘাট জামে মসজিদ থেকে সৌরবিদ্যুতের তিনটি ব্যাটারি চুরি করেন ফোরকান। এই ব্যাটারি প্লাস্টিকের বস্তায় করে বিক্রির উদ্দেশ্যে বরগুনায় যাওয়ার পথে ছোটবগী খেয়াঘাট এলাকা থেকে স্থানীয় স্বপন মৃধা সন্দেহ করে তাঁকে আটক করেন। তখন ফোরকান স্বীকার করেন এই ব্যাটারি মসজিদ থেকে চুরি করেছেন তিনি। পরে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম জোমাদ্দারের কাছে ফোরকানকে হস্তান্তর করেন। এদিকে এ নিয়ে বথিপাড়া আশ্রয়ণে স্থানীয়ভাবে সালিস মীমাংসার জন্য বৈঠক বসানো হয়। ওই বৈঠকে চুরির দায়ে স্বামী ফোরকানের সঙ্গে সংসার না করার সিদ্ধান্ত নেন স্ত্রী মাসুমা বেগম। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ও ইউপি সদস্যদের উপস্থিতিতে ওই ইউনিয়নে কাজী মহিবুল্লাহকে ডেকে স্বামীকে তালাক দেন স্ত্রী। পরে ব্যাটারিগুলো মসজিদ কমিটির সদস্যদের ডেকে ফেরত দেওয়া হয়েছে এবং ফোরকানকে পুলিশে না দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম জমাদ্দার বলেন, ‘মসজিদের ব্যাটারি চুরি হওয়ার বিষয়টি মুসুল্লিরা প্রথমে আমাকে জানায়। পরে বগীতে স্থানীয়রা ব্যাটারি চোরকে আটক করে আমাকে খবর দেয়। আমি গিয়ে চোরকে হাতেনাতে আটক করে নিয়ে আসি। পরে স্থানীয়ভাবে বৈঠকের সময় তাঁর স্ত্রী চোর স্বামীর সঙ্গে ঘরসংসার করবে না বলে কাজী ডেকে তালাক দেয়।’ স্ত্রী মাসুমা বেগম বলেন, ‘যে স্বামী আল্লাহর ঘর মসজিদ থেকে ব্যাটারি চুরি করতে পারে, তার সঙ্গে আর যাই হোক, ঘর-সংসার করা যায় না। এ জন্য কাজি ডেকে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে তালাক দিয়েছি।’ কাজি মুহিব্বুল্লাহ বলেন, ‘মাসুমা বেগমের স্বামী ফোরকান মসজিদের ব্যাটারি চুরি করার অপরাধে তাঁকে শরিয়ত মোতাবেক তালাক দেয়।’ এ বিষয়ে তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।