পর্ণগ্রাফি নিয়মিত দেখার ফলে আপনি ঘুম যাবার আগেও তা দেখতে হয়। এরফলে আপনার সেক্স এর উপর প্রভাব পরে।
সবমিলিয়ে যদি বলা যায় আর্থিক, সময়, সবদিকে আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হন।
আপনি যতক্ষণ এটি দেখতে থাকেন, ততক্ষণের প্রতিটি সেকেন্ডে সেকেন্ডে আপনার অন্তরে একের পর এক অব্যাহতভাবে কালো ফোঁটা পড়তে থাকে এবং এভাবে অন্তর একেবারে কালো হয়ে যায় এবং আপনার ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে নেক আমলের প্রতি অনীহা চলে আসে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا أَخْطَأَ خَطِيئَةً نُكِتَتْ فِي قَلْبِهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ ، فَإِذَا هُوَ نَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ وَتَابَ سُقِلَ قَلْبُهُ ، وَإِنْ عَادَ زِيدَ فِيهَا حَتَّى تَعْلُوَ قَلْبَهُ وَهُوَ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَ اللَّهُ : كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাওবাহ করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তা’আলা যার বর্ণনা করেছেন, কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে— (সূরা মুত্বাফফিফীন ১৪)। (তিরমিযী ৩৫৭ ইবনু মাজাহ ৪২৩৪)
পর্ণগ্রাফি নিয়মিত দেখার ফলে যৌনশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।
পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তির মস্তিষ্ক সব সময় নারীর দেহ নিয়ে চিন্তা করে ফলে তার ব্রেনের স্বাভাবিক প্রখরতা নষ্ট হয়ে যায়। ডিপ্রেশন তৈরী করে।
— পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক দায়িত্ববোধ হারিয়ে ফেলে। দুনিয়ার আর কোন চিন্তা তার মাথায় থাকে না পর্ণগ্রাফি ছাড়া। ফলে তার স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হয়। অন্য দশটা মানুষের মত সে আর স্বাভাবিক থাকতে পারে না।
— পর্ণগ্রাফি আসক্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক রুচিবোধ নষ্ট হয়ে যায়। সে যেমন কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য দেখেছে তেমনি দৃশ্য সে তার বউয়ের কাছ থেকে আশা করে যা কখনই কাংখিত নয়।
পর্ণগ্রাফি এমন নেশা যা না দেখলে ঘুম হবে না। প্রতিদিনই ইন্টারনেট ক্রয় করে তাকে এসব দেখতে হয়। তাই এটি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি করে।
যে চোখ দিয়ে আপনি নারীর দেহ দেখবেন সেই চোখ দিয়ে কখনো আল্লাহর ভয়ে পানি বের হবে না। কারণ আপনার অন্তর মরে যাবে। কোন ইবাদতেই আপনি মজা পাবেন না।
সুতরাং সময় থাকতে নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আপনি একা ঘরে কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনের সামনে বসে যা করছেন তা আর কেউ না দেখলেও আল্লাহ্ দেখছেন, আর ফেরেশতারা তা প্রতিমুহূতে লিখে রাখছে এক পরিষ্কার গ্রন্থে। আল্লাহ্ যদি এখনো আপনার কুকর্ম মানুষের সামনে প্রকাশ না করে দিয়ে থাকেন তাহলে বুঝবেন আপনাকে আল্লাহ্ তাওবা করার জন্য সুযোগ দিচ্ছেন।
আপনি যদি তাওবা না করে মারা যান, তাহলে এই গ্রন্থের সবকিছু একদিন আপনার সামনে তুলে ধরা হবে, আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু সবাই আপনার আমলনামা দেখতে পাবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, সেদিনের সেই লজ্জার সম্মুখীন কি আপনি হতে পারবেন?
পর্ণগ্রাফি থেকে মুক্তির দোয়া:
এ জঘন্য হারাম থেকে তাওবা করার জন্য কোন ক্রমধারা অবলম্বনের প্রয়োজন নেই। এ ধরণের চিন্তা হতে পারে শয়তানের ধোঁকা। বরং একজন মুমিন যখনই জানবে এটি হারাম তখনই তার সামনে এটি ত্যাগ করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْراً أَنْ يَكُونَ لَهُمْ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلالاً مُبِيناً
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোন (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়। আর যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হলো। (সূরা আহ্যাব ৩৬)
হজরত আবু আহমাদ শাকাল ইবনু হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল্লাম- আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, তুমি বল-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি সাময়ি, ওয়া মিন বাচারি ওয়া মিন শাররি লিসানি ওয়া মিন শাররি ক্বালবি ওয়া মিন শাররি মানিয়্যি।’