স্টাফ রিপোর্টার(এস,এম,মিঠু)
আজ ১০ মে (মঙ্গলবার) জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: সরদার রাশেদ মোবারক জানান, জাতীয় সংসদের হুইপ ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি মঙ্গলবার আধুনিক জেলা হাসপাতালে ওই ডায়ালাইসিস সেন্টারের উদ্বোধন করেন।
এতে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতাল। মেডিক্যাল কলেজের বাইরে জেলা হাসপাতাল গুলোতে ডায়ালাইসিস সেন্টারের উদ্বোধন দ্বিতীয় হচ্ছে জয়পুরহাট। প্রথম জেলা হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছিল সিরাজগঞ্জে। ডা: সরদার রাশেদ মোবারক আরও জানান, জয়পুরহাটের কিডনী রোগীদের ডায়ালাইসিস করার জন্য দিনাজপুর, বগুড়া অথবা নওগাঁতে যেতে হতো।
এতে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হতো রোগীদের। এসব মিলে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করার জন্য দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল জেলা বাসীর। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সার্বিক তত্বাবধানে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে চালু হচ্ছে ডায়ালাইসিস সেন্টারের। বিনা চিকিৎসায় একজন মানুষও যেন মারা না যায় এবং স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার বর্তমান সরকারের নির্বাচণী অঙ্গীকার পূরণে কাজ করে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, জেলা আধুনিক হাসপাতালে ইতোমধ্যে ১০ বেডের আইসিইউ ইউনিট চালু করা হয়েছে। আর্টিফিসিয়াল শ্বাস প্রশ্বাস চালানোর জন্য ভেনটিলেটর মেশিন, অটোমেটিক শিরিঞ্জ পাম্প মেশিন, কার্ডিয়াক মনিটর স্থাপন এখানে পালস, প্রেসার, অক্সিজেন সেচুরেশন এবং ইসিজি করা যাবে।
৬০ থেকে ৮০ লিটার পার মিনিটে অক্সিজেন সাপ্লাই দেওয়ার জন্য হাইফ্লোনেজাল ক্যানোলা স্থাপন, শ্বাসনালী পরিষ্কার করার জন্য সাকার মেশিন, শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক রাখার জন্য বিপেপ এবং সিপেপ, হঠাৎ বন্ধ হওয়া হার্টকে শক দিয়ে সচল করার জন্য ডিফিব্রিলেটর স্থাপন এবং প্রতিটি বেডের বিপরীতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন, একটি ইয়ার ও একটি ভ্যাকিউম লাইন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন এমন রোগীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর বাইরের কোন হাসপাতালে যেতে হবে না।
১০ বেডের কোভিড ইনটেনসিভ কেয়ার ইফনিট ( আইসিইউ) প্রস্তুত করার জন্য সরকারের বরাদ্দের পাশাপাশি স্থানীয় সহায়তায় প্রায় সোয়া কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র বাসস’কে জানায়, ৫০ শয্যা থেকে ১৯৯৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারিী ১০০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু করা হয়। অবকাঠামোগত সুবিধা থাকায় একই জনবল দিয়ে ২০০৬ সালের ১৬ জুলাই ১শ ৫০ শয্যার হাসপাতাল চালু করা হয়। জেলার ১২ লক্ষাধিক লোকের জন্য জেলা আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হলেও আধুনিক সুযোগ সুবিধা ও স্বাস্থ্য সেবার মান ভাল হওয়ায় পার্শবর্তী নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট, বদলগাছী উপজেলা, দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর, ঘোড়াঘাট উপজেলা, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ও বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ রোগী আসে জয়পুরহাট জেলা হাসপাতালে। ফলে ১০০ বেডের হাসপাতাল হলেও সব সময় আড়াইশ থেকে তিনশ রোগী ভর্তি থাকেন এখানে।
জেলাবাসীর ২৫০ শয্যায় উন্নীত করনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী জয়পুরহাট জেলা হাসপাতালকে ১০০ থেকে ২৫০ বেডে উন্নীত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অনুমোদিত প্রাক্কলন মূল্য হচ্ছে ৩৬ কোটি ৩৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬২৩ টাকা। এখানে ১২ তলা ফাউন্ডেশনে ৭তলা পর্যন্ত অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে।
৪০ টি গাড়ি রাখার পাকিং বেজমেন্টসহ, ৪টি লিফ্ট, অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন জরুরী বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, প্যাথলজি, রেডিওলজি বিভাগ, এ্যানেসথেসিয়া, ইমেজিং বিভাগ, মেল-ফিমেল সার্জারী বিভাগ, গাইনী অবসসহ ক্যান্টিন ও মেডিক্যাল ষ্টোর রয়েছে। জেলা গণপূর্ত বিভাগের তত্বাবধানে জয়েন্ট ভেন্সার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিবিএল-কেটি নির্মাণ কাজ করছেন। ইতোমধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ ও যন্ত্রপাতিও বসানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জেলা আধুনিক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য বিশিষ্ট্য সমাজসেবক রাজা চৌধুরী বলেন, জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করতে সরকার ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
এতে জেলার সাধারণ মানুষ উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ২৫০ শয্যার এ জেলা হাসপাতালের ৯৮ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে এটি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল পদায়নের কাজ চলছে বলে জানান, জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: সরদার রাশেদ মোবারক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫০ শয্যার এ জেলা হাসপাতাল ভবনের উদ্বোধন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।